নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, এবং অব্যবস্থাপনার মধ্যেও দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ৭৩ হাজার ৭৯ কোটি টাকা, যা প্রবৃদ্ধির হার ৩.৮ শতাংশ।
চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। জুন শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকায়। গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকিং সেবা ও ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের ফলে সেখানে শহরের তুলনায় বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে—গ্রামে ৪.৮৭ শতাংশ এবং শহরে ৩.৬ শতাংশ।
জুন শেষে শহরাঞ্চলে জমা ছিল ১৬ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, আর গ্রামে জমা ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা। যদিও মোট আমানতের ৮৪ শতাংশের বেশি এখনো শহরভিত্তিক, তবে গ্রামীণ অংশের প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র ও প্রণোদনা প্রকল্পগুলোর ভূমিকা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া, সুদের হারেও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমানত বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্চে গড় সুদহার ছিল ৬.২৪ শতাংশ, যা জুনে দাঁড়িয়েছে ৬.৩১ শতাংশে। সামান্য এ বৃদ্ধি অনেক আমানতকারীকে ব্যাংকে অর্থ রাখায় আগ্রহী করেছে।
অন্যদিকে, এই সময়ে ব্যাংক ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মোট ঋণ ছিল ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা, যা জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৭২ কোটিতে। ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.২৬ শতাংশ। এর ৯২ শতাংশের বেশি ঋণ শহরাঞ্চলে বিতরণ করা হয়েছে। গ্রামে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অতি সীমিত—মাত্র ৭.৫৪ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসা ও শিল্প কার্যক্রম শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় ঋণের বড় অংশও সেখানে কেন্দ্রীভূত। তবে কিছু কিছু ভালো পারফর্মিং ব্যাংকেই মূলত আমানতের এই প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো এখনও আমানত টানতে পারছে না।
তবে শুধু আমানত বৃদ্ধি ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট নয় বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সুদের হার বাড়লেও যদি ঋণ পুনঃপ্রাপ্তি নিশ্চিত না হয় এবং খেলাপি ঋণ না কমে, তাহলে এই প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদি হবে না।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ব্যাংকে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন। গবেষণা সংস্থার এক বিশ্লেষক বলেন, আমানত বৃদ্ধিকে ইতিবাচক বলা গেলেও এটিই চূড়ান্ত সমাধান নয়। ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে ঋণ আদায় ব্যবস্থা মজবুত করতে হবে এবং অনিয়ম দমন করতে হবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ব্যাংক খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে আমানত প্রবৃদ্ধি কিছুটা স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে। তবে তা টেকসই করতে হলে গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।