ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচনের প্রথম ঘণ্টায় রোকেয়া হলের টিএসসি কেন্দ্রে মোট কতটি ভোট পড়েছে, তা নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন কেন্দ্রপ্রধান অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা।
তিনি জানান, সকাল ৯টা ২০ মিনিটে গণমাধ্যমকে বলেন, কেন্দ্রের ১৯টি বুথেই ভোটগ্রহণ চলছে। প্রতিটি বুথে গড়ে প্রায় ৪০ জন ভোট দিয়েছেন। কোনো বুথে ৩৬টি আবার কোনো বুথে ৪৫টি পর্যন্ত ভোট পড়েছে। সেই হিসেবে প্রথম ঘণ্টায় আনুমানিক ৭৬০টি ভোট গ্রহণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী, যার মধ্যে নারী প্রার্থী রয়েছেন ৬২ জন। হল সংসদের ১৮টি হলে ১৩টি করে পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও ১,০৩৫ জন।
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বামধারার দুটি জোট ও ১০টির মতো স্বতন্ত্র প্যানেল। এর ফলে এবারের নির্বাচন হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২০ হাজার ৮৭৩ জন এবং ছাত্রী ১৮ হাজার ৯০২ জন। আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। প্রত্যেক ভোটার কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের মোট ৪১টি পদে ভোট দিতে পারছেন।
ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে ৪টার আগে যেসব শিক্ষার্থী লাইনে থাকবেন, তারা সবাই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময় নিলেও নিরবিচারে ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে।
ভোটগ্রহণ ও ফলাফল গণনায় ব্যবহার করা হচ্ছে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন) প্রযুক্তি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে বসানো হয়েছে এলইডি স্ক্রিন, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল দেখানো যাবে। সবশেষে সিনেট ভবন মিলনায়তনে কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। আটটি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। মোতায়েন রয়েছে মোবাইল প্যাট্রল, ডগ স্কোয়াড, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত, ডিবি, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য ও স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স। মনিটরিং সেলের মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে ভোটকেন্দ্রগুলোতে।
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তিনটি প্যানেল ঘিরে— ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বাগছাস সমর্থিত প্রার্থীদের নিয়ে। এছাড়া উমামা ফাতেমাসহ বামজোট এবং কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও আলোচনায় রয়েছেন। বিশেষ করে ভিপি পদে শামীম হোসেন, জিএস পদে আরাফাত চৌধুরী এবং এজিএস পদে তাহমীদ আল মুদাসসীর চৌধুরীর নাম শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে ঘুরছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন নির্ভয়ে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।