পশ্চিম তীর দখল নিয়ে ইসরায়েলের এক মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে— ইসরায়েল যদি দখলদারিত্বমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়, তবে ২০২০ সালের ‘আব্রাহাম চুক্তি’ বাতিল করা হতে পারে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের এক কট্টরপন্থী মন্ত্রী গাজাকে 'সন্ত্রাসী রাষ্ট্র' আখ্যা দিয়ে বলেন, এই অঞ্চল ইসরায়েলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘দেশ ভাগ করে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের ধারণা চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে।’ তার এই বক্তব্যের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
অস্ট্রেলিয়া ও স্পেন ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ, আর স্পেন গাজায় পাঠিয়েছে শতাধিক জাহাজের মানবিক সহায়তা। তবে ইসরায়েলের ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
আমিরাতের একজন শীর্ষ কূটনীতিক স্পষ্টভাবে জানান, পশ্চিম তীর দখল করা তাদের জন্য ‘রেড লাইন’। আব্রাহাম চুক্তির মূল ভিত্তিই ছিল— ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে। এই শর্ত লঙ্ঘিত হলে চুক্তির অস্তিত্বও বিপন্ন হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সেই সম্পর্ককে গুরুতরভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে।
এদিকে, বিতর্কিত এক মানচিত্র প্রকাশ করে ইসরায়েলের মন্ত্রী দাবি করেছেন, পশ্চিম তীরের ৮২ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের অধীনে আনা হবে এবং মাত্র ১৮ শতাংশ জমিতে ছয়টি ফিলিস্তিনি শহরকে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। এর ফলে বেথলেহেমসহ বহু ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনি এলাকা বাদ পড়বে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে সাত লাখের বেশি ইহুদি এবং ৩৩ লাখের মতো ফিলিস্তিনি বসবাস করছেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বসতি অবৈধ হলেও ইসরায়েল তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। বরং সম্প্রতি আরও নতুন বসতির অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার।
ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের অনেক মন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছেন। তবে আমিরাতের সতর্কবার্তার পর আন্তর্জাতিক মহল এখন নজর রাখছে— ইসরায়েল তার আগ্রাসী পরিকল্পনায় অটল থাকে কিনা, নাকি বিশ্ব চাপের মুখে পিছু হটে।