Skip to Content

গাজার পানির লাইনে লাশ

September 4, 2025 by
Editorialnews24
| Inteshar Ahmed Shawan

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-মাওয়াসি এলাকায় বুধবার সকালে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় সাত শিশুসহ অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। স্থানীয়দের ভাষায়, এটি এমন এক জায়গা যেখানে ইসরায়েল নিজেই ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো ভেদাভেদ ছাড়াই ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালায় এবং মুহূর্তেই ওই এলাকাটি রক্তে ভরে ওঠে।

হামলার সময় অনেক শিশু পানি আনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। হামলার পরই সেখানে রক্তের দাগ স্পষ্ট দেখা গেছে। মাটি রক্তে ভেজা ছিল এবং আতঙ্কিত মানুষের চিৎকার চারপাশে গুঞ্জরিত হচ্ছিল। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শিশুরা জানালা ভেঙে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছিল। স্থানীয় এক বাসিন্দা আলজাজিরাকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এরা বাচ্চা, নিষ্পাপ শিশু। তাদের ওপর হামলা চালানো হলো, যারা কোনো অপরাধ করেনি। ঈশ্বরের কাছে আবেদন, কিছু সহানুভূতি দেখাও। আমরা ক্লান্ত, আর রক্তপাত চলবে না।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরের আরও ভেতর প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। স্থল ও বিমান হামলায় বাড়ছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। বিশেষ করে শহরের জনবহুল এলাকাগুলো, যেমন শেখ রাদওয়ান, তুফা, শুজাইয়া ও রেমাল এলাকা ড্রোন ও ট্যাঙ্ক হামলার কবলে পড়ছে। তীব্র বিমান ও কামানের গোলা নিক্ষেপের মধ্যে রাতের আকাশ আলোকিত হচ্ছে।

গাজার এক বাসিন্দা, ৬০ বছর বয়সী পাঁচ সন্তানের মা জাকেয়া সামি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমাদের তাঁবুগুলো পুড়ে যাচ্ছে। দখলদাররা আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে। আমরা মারা যাব। যারা আমাদের মৃত্যু দেখছে, তাদের আমরা কখনো ক্ষমা করব না।’

সেনাবাহিনী Sheikh Radwan এলাকার তিনটি স্কুলে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। হামলার ফলে সেখানে আগুন লেগে যায় এবং অনেকে দগ্ধ হয়েছেন। গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আল-আফ পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় মোট ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর আগের দিন মঙ্গলবার শিশুসহ ১০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গাজার ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা ৩৬৭ জনে উন্নীত করেছে। এর মধ্যে ১৩১ জন শিশু রয়েছে। গত ২২ মাসে গাজায় সংঘটিত সংঘাতের ফলে মোট ৬৩ হাজার ৬৩৩ জন নিহত ও ১ লাখ ৬০ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে, ইয়েমেনের হুতি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে, যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তা প্রতিহত করার কথা বলেছে। হুতিরা তাদের হামলাকে ‘ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, তাদের অভিযান ক্রমবর্ধমান গতিতে চলবে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের ভেতরে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা সরকারকে যুদ্ধ বন্ধ এবং গাজা থেকে বন্দিদের ফিরিয়ে আনার জন্য চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ও অন্যান্য জায়গায় প্রতিবাদ সভা হয়েছে। জেরুজালেমের কয়েকটি স্থানে আগুন ধরানো হয়েছে।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ গাজার যুদ্ধ বন্ধে ইউরোপের ব্যর্থতাকে ‘বিশ্বব্যাপী ইউরোপের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বড় ধাক্কা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপে ইসরায়েলকে প্রভাবিত করার বিষয়ে বিভাজন বিরাজ করছে, যা এই অঞ্চলের মানবিক সংকট আরও তীব্র করছে। গাজায় চলমান সংঘাতকে তিনি ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এ ধরনের অবস্থা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

Editorialnews24 September 4, 2025
Share this post
Sign in to leave a comment
Droppable-area shared across all blog's pages