ইসরায়েলের টানা ৭০০ দিনের সামরিক অভিযানে গাজার প্রায় পুরো ভূখণ্ড ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্যমতে, অবকাঠামোর ৯০ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি।
এই দীর্ঘমেয়াদি হামলায় এখন পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৭০০ জন নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার শিশু ও ১২ হাজার ৫০০ নারী। গাজা সরকারের হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ২ হাজার ৭০০ পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
নিহতদের মধ্যে আছেন ১ হাজার ৬৭০ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ২৪৮ জন সাংবাদিক, ১৩৯ জন সিভিল ডিফেন্স সদস্য এবং ১৭৩ জন পৌর কর্মী। এছাড়া, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষ, যাদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
হামলায় ৩৮টি হাসপাতাল, ৮৩৩টি মসজিদ এবং ১৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। পাশাপাশি, হাজার হাজার সরকারি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা গাজার নাগরিক সেবাকে কার্যত অচল করে দিয়েছে।
গাজা সরকারের অভিযোগ, ইসরায়েল শুধু হামলাই করছে না, বরং খাদ্য অবরোধের মাধ্যমেও মানবিক সংকট সৃষ্টি করছে। গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলের বাস্তুচ্যুত মানুষদের ঘরে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না, এবং শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে দেওয়া হয়েছে। ফলে ২৪ লাখ মানুষ, যার মধ্যে ১০ লাখ শিশু, বর্তমানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। বর্তমানে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যা মামলার মুখোমুখি রয়েছে।
গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর ইসরায়েলের সহযোগী দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে এই ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী করেছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ, আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে— হামলা বন্ধ করা, অবরোধ প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুতদের ঘরে ফেরানো এবং ইসরায়েলি নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার।