নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা চূড়ান্ত রূপ নেওয়ায় দেশজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি সরকারের পতনের পর রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরের সড়কে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান টহল দিচ্ছে। বসানো হয়েছে সামরিক চেকপয়েন্ট, যেখানে যানবাহনের কাগজপত্র ও সাধারণ মানুষের পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে। জনগণকে ঘরে থাকতে এবং অপ্রয়োজনীয় বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন।
বিক্ষোভরত জেনারেশন-জি আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কিছু অনুপ্রবেশকারী সহিংসতা ছড়িয়েছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজা রাম বাসনেটও এ দাবি সমর্থন করে জানান, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ঠেকাতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, সরকারের পতনের পর নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগডেল ইতোমধ্যে আন্দোলনকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন। ছাত্রনেতারা তাদের দাবির নতুন তালিকা তৈরি করছেন বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে কারা আসতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনায় রয়েছে দুটি নাম। কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ এবং নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। জেন-জি আন্দোলনকারীরা সুশীলা কার্কিকেই পছন্দ করছেন বলে জানা গেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, তিনি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন।
নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুদিনের সহিংসতায় কমপক্ষে ৩০ জন নিহত এবং এক হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। সোমবার বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারি বাহিনীর গুলিবর্ষণের পর পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টসহ মন্ত্রিসভার শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেও তরুণদের মধ্যে পরিবর্তনের আশাবাদ দেখা যাচ্ছে। ১৪ বছর বয়সী সাং লামা মনে করেন, এই আন্দোলন দেশের পুরনো রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে নতুন কিছু গড়ার সুযোগ তৈরি করবে। ২৪ বছর বয়সী পরশ প্রতাপ হামাল, যিনি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, বলেন যে এখন সময় এসেছে এমন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার, যারা সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধি হবে।
তবে সহিংসতা নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। ৩৬ বছর বয়সী রাকেশ নিরাউলা যেমন সহিংসতার সমালোচনা করে বলেন, পরিবর্তন প্রয়োজন, কিন্তু সহিংসতা কোনো সমাধান নয়। উদ্যোক্তা প্রভাত পাউডেল হতবাক হয়ে বলেন, সরকারি ভবনে আগুন দেওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এগুলো জাতির সম্পদ।
নেপালের পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, নেপালে আটকে থাকা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের নিরাপদে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জনগণকে অনুরোধ করেছেন, যেন কেউ আতঙ্ক ছড়ানো বা জটিলতা তৈরির চেষ্টা না করে।