ফ্রান্সে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে দেশটির একটি সংসদীয় কমিটি। একই সঙ্গে, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের জন্য ‘ডিজিটাল কারফিউ’ চালুরও প্রস্তাব এসেছে। কমিটির মতে, রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার এই বয়সীদের জন্য নিষিদ্ধ করা উচিত।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ফ্রান্সের আইনপ্রণেতারা এই সুপারিশগুলো একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করতে সংসদীয় কমিটি কয়েক মাস ধরে অভিভাবক, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি ও জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সারদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে।
কমিটির প্রধান আর্থার ডেলাপোর্ট জানিয়েছেন, জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক ব্যবহারকারীদের ‘জীবন হুমকির মুখে ফেলছে’—এমন অভিযোগে তিনি প্ল্যাটফর্মটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে যাচ্ছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৪ সালের মার্চে সাতটি পরিবার টিকটকের বিরুদ্ধে মামলা করার পরই এই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। টিকটকের অ্যালগরিদম ও এর মানসিক প্রভাব নিয়ে তদন্ত করছে কমিটি।
প্রতিবেদনের প্রধান লেখক লর মিলার জানান, “টিকটকের আসক্তি তৈরি করার নকশা ও অ্যালগরিদম মূলত অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অনুকরণ করা হয়েছে। এতে তরুণ ব্যবহারকারীরা ক্ষতিকর কনটেন্টের এক বিপজ্জনক চক্রে আটকে পড়ছে।”
চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটক জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা ফ্রান্সে ২০২৩ সালে ৯৮ শতাংশ নিয়মভঙ্গকারী কনটেন্ট শনাক্ত করেছে। তবে সংসদীয় কমিটি বলেছে, এই প্রচেষ্টা পর্যাপ্ত নয়। বরং প্ল্যাটফর্মটির অ্যালগরিদমই তরুণদের বিপদে ফেলছে এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করছে।
এক ১৮ বছর বয়সী তরুণীর আত্মহত্যার প্রসঙ্গ টেনে তার মা জানান, “টিকটকে প্রকাশিত ভিডিওগুলো আমার মেয়েকে আরও হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। যদিও সে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল, কিন্তু টিকটক সেই অবস্থাকে আরও খারাপ করে তোলে।”
কমিটির প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আগামী তিন বছরের মধ্যে যদি টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইউরোপীয় আইন অনুসরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে ১৫ বছরের কম বয়সীদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা ১৮ বছরের কম বয়সীদের ওপরও প্রযোজ্য হতে পারে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ১৬ বছরের নিচের বয়সীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল।