সাফল্য:
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশে একটি নতুন ধারার রাজনীতি এবং প্রশাসনিক সংস্কার সূচিত হয়। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার সবচেয়ে বড় সাফল্য দেখিয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির পর শান্তি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ছিল সময়ের দাবি, এবং তা পূরণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপে গঠন করা সংস্কার কমিশনগুলো নীতিগতভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে।
অর্থনৈতিক খাতে রেকর্ড রেমিট্যান্স, মূল্যস্ফীতি হ্রাস, রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগে ইতিবাচক অগ্রগতি স্পষ্টভাবে সরকারের কার্যকারিতা প্রমাণ করে। প্রবাসীদের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে, যার ফলে টাকার মান ডলারের তুলনায় বাড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে বহুমুখী পররাষ্ট্রনীতিও গড়ে তুলেছে এই সরকার। একইসঙ্গে, পবিত্র রমজানেও বাজার স্থিতিশীল রাখা, দমনমূলক সাইবার আইন বাতিল করে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া, এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থনের শহীদ-আহতদের পুনর্বাসনে যথেষ্ট রাষ্ট্রীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
অধিকন্তু, সরকার জাতীয় ঐকমত্য তৈরির জন্য 'জুলাই সনদ' প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যা আগামী দিনের নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করেছে। নির্বাচন কমিশনকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে রূপান্তরের উদ্যোগ এবং সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে নীতিগত ঘোষণা সরকারের উন্নয়নভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রমাণ।
ব্যর্থতা:
অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু ব্যর্থতাও স্পষ্ট। প্রথমত, সংস্কার কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রেই ধীর গতিতে এগিয়েছে। কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দীর্ঘসূত্রতা দেখা গেছে। বিশেষ করে বিচারব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক সংস্কারে কাঙ্ক্ষিত গতি এখনো অর্জিত হয়নি।
দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা সত্ত্বেও দেশের বড় কয়েকটি দল এখনো সরকারকে পুরোপুরি মেনে নেয়নি। ফলে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। নির্বাচন ঘিরে অনেকের মধ্যে এখনো সংশয় রয়েছে, বিশেষ করে সব দলের আস্থা অর্জনে সরকারের ব্যর্থতা দৃশ্যমান।
এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি থাকলেও, দালালচক্র বা মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব পুরোপুরি কমানো সম্ভব হয়নি। অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার এখনো অনুপস্থিত। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সরকার যে ধরনের সহযোগিতা পৌঁছে দিতে চেয়েছিল, তা অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় শহর বা প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
সবচেয়ে বড় কথা, জনসাধারণের অনেক উচ্চ প্রত্যাশার তুলনায় সরকারের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও, কিছু ঘটনায় তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া পর্যাপ্ত গতি পায়নি। এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে কিছুটা সমালোচনাও রয়েছে।