সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক সফটওয়্যার জায়ান্ট সেলসফোর্স আবারও বড় ধরনের চাকরিচ্যুতির পথে হাঁটলো। কাস্টমার সাপোর্ট বিভাগ থেকে প্রায় ৪,০০০ জন কর্মীকে বিদায় জানিয়ে টিমের আকার ৯,০০০ থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে ৫,০০০-এ। এখন সেখানে মানুষের বদলে এআই এজেন্টই সামলাচ্ছে প্রায় ১০ লাখ গ্রাহকের কথোপকথন।
সিইও মার্ক বেনিওফ সম্প্রতি এক টকশোতে খোলাখুলিই বলেন—“আমার কম মানুষ লাগবে।” অনেকেই এটিকে ছাঁটাইয়ের সরাসরি ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। এর আগে তিনি বলেছিলেন, এআই ইতোমধ্যেই কিছু ক্ষেত্রে ৩০–৫০ শতাংশ কাজ সামলাচ্ছে। এ কারণেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানি ১,০০০ জনকে ছাঁটাই করে খরচ ১৭ শতাংশ কমাতে পেরেছিল।
তবে সবকিছু ঘটছে রেকর্ড আয় সত্ত্বেও। জুলাই ৩১ তারিখে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে সেলসফোর্সের আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০.২ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি শেয়ার বাইব্যাক প্রোগ্রামও বাড়ানো হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু পরবর্তী ত্রৈমাসিকের আয়ের পূর্বাভাস প্রত্যাশার নিচে থাকায় ভালো সময়ের পরই শেয়ারদর পড়ে যায় ৪ শতাংশের বেশি।
বেনিওফ জানিয়েছেন, ফাইজার, ম্যারিয়ট আর ইউএস আর্মির মতো গ্রাহকরা তাদের কাজের ধরণ পাল্টে এআইকে সঙ্গে নিচ্ছেন। তাঁর ভাষায়, “মানুষ আর এআই একসাথে কাজ করলে কাজের গতি বাড়ে, গ্রাহকও বেশি সন্তুষ্ট হয়।” তবে তিনি এটাও সতর্ক করে দেন—যদি এআই মানুষের বিচার, সৃজনশীলতা বা সহানুভূতিকে একেবারে প্রতিস্থাপন করে ফেলে, সেটা হবে বড় ক্ষতি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ মিশ্র বার্তা দিচ্ছে। টেক কনসালট্যান্ট ওয়াসিম মিরজা আল জাজিরাকে বলেছেন, “কয়েক মাস আগেই সেলসফোর্স বলছিল এআই চাকরির জন্য হুমকি নয়। এখন এত বড় ছাঁটাই সেই বিশ্বাসে ফাটল ধরাচ্ছে।”
একাডেমিকদের আশঙ্কা, এই ধরণের ছাঁটাই বিশেষ করে জুনিয়র চাকরিগুলোকে দুর্বল করে দিচ্ছে—যা ভবিষ্যতের ট্যালেন্ট পুলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অক্সফোর্ডের গবেষক ফ্যাবিয়ান স্টেফানি সতর্ক করে বলেন, যদি কোম্পানিগুলো নতুন প্রজন্মের সুযোগ কেটে দেয়, তারা পরে দক্ষ কর্মী জোগাড় করতেও সমস্যায় পড়বে।
সংখ্যার দিক থেকেও এআইয়ের প্রভাব স্পষ্ট। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ২২–২৫ বছর বয়সী তরুণদের চাকরির সুযোগ ১৩ শতাংশ কমেছে। শুধু টেক সেক্টরেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদের চাহিদা ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
আসলে সেলসফোর্সের এআই অভিযাত্রা নতুন নয়। ২০২৩ সালের শুরুতে কোম্পানি বিশ্বজুড়ে ৭,০০০ কর্মী ছাঁটাই করেছিল, আবার বছরের শেষে নিয়োগ দিয়েছিল ৩,০০০ জন। তবে এবার কাস্টমার সাপোর্টের মতো গ্রাহক-মুখী বিভাগে সরাসরি এআই বসানোই বাড়াচ্ছে উদ্বেগ।
ফলাফল কী? স্বল্পমেয়াদে খরচ বাঁচিয়ে মুনাফা বাড়তে পারে ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ব্র্যান্ড, কর্মসংস্কৃতি, প্রতিভার যোগান আর গ্রাহকের আস্থা—সবকিছুই ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এখনই দরকার আরও দায়িত্বশীল নীতি, নতুন করে প্রশিক্ষণ আর সামাজিক সুরক্ষার পরিকল্পনা।