চিকিৎসা শেষে অবশেষে বাসায় ফিরেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সেই দুই শিক্ষার্থী, যারা গত ২১ জুলাইয়ের ভয়াবহ ঘটনার পর দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি হয়েছিল জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে (NIBPS)। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা হাসপাতাল ছেড়ে যায়। তাদের বাড়ি ফেরার যাত্রা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।
দুইজনই শিশু, বয়স মাত্র ১১। একজন রাইসা, পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। অন্যজন মোনতাহা তুয়া কর্ণ, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। দুর্ঘটনার দিনই দু’জনকেই ভর্তি করা হয়েছিল বার্ন ইউনিটের আলাদা আলাদা কেবিনে। রাইসা ছিল কেবিন ১৪৬৬/এ-তে, কর্ণ ছিল কেবিন ১৪০৭-এ।
এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে কেটেছে তাদের শৈশবের দিনগুলো—চিকিৎসা, ব্যথা, ভয় আর অপেক্ষার মধ্য দিয়ে। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তারা যখন গাড়িতে উঠছিল, সবার চোখে-মুখে ছিল স্বস্তি, কিছুটা হাসি আর অনেক কৃতজ্ঞতা।
চিকিৎসার পুরো সময়জুড়েই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী তাদের পাশে থেকেছে। শুধু ভর্তি বা চিকিৎসা সেবা নয়—থাকা, খাওয়া, ওষুধ, রক্ত, যাতায়াত—প্রত্যেকটি ধাপে তারা সুনির্দিষ্ট ও দ্রুত সাপোর্ট দিয়েছে। এমনকি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার জন্যও উবার সার্ভিসের মাধ্যমে নিরাপদ পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে তারা।
রাইসার পরিবার থাকে ঢাকার তুরাগ থানার সুকরোবাংগা মূড় এলাকায়। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরের লালপুরে। কর্ণের পরিবার ঢাকার সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের আরকান গ্রামে বসবাস করে।
এই দুই শিক্ষার্থীর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়াটা শুধুই একটি চিকিৎসা-সংক্রান্ত আপডেট নয়—এটি একটা প্রতীক। ভয়াবহ এক ঘটনার পরে কীভাবে রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান—বাংলাদেশ বিমানবাহিনী—দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটা এই ঘটনাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি থাকা বাকি শিক্ষার্থীরাও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছে কিছুটা স্বস্তি—যদিও সেই দিনের ভয়াবহ স্মৃতি এখনো অনেকের মনে দগ্ধ হয়ে আছে।
মাইলস্টোন স্কুলে ঘটে যাওয়া সেই অপ্রত্যাশিত ট্র্যাজেডির পর এভাবে একটি একটি করে শিক্ষার্থী ঘরে ফেরা মানে শুধু চিকিৎসার সফলতা নয়, বরং একটি বড় মানবিক প্রচেষ্টার বাস্তব ফল। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এমন সমন্বিত সহায়তা আগামী দিনে আরও অনেক সংকটে পথ দেখাবে—এমনটাই প্রত্যাশা অভিভাবকদের।