রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবি কার্ড বিতরণের নতুন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেক বিধবা, প্রতিবন্ধী এবং দিনমজুর। মাসদার আলী (৫০), যিনি একটি দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়েছেন এবং এখন এক পায়ে ভর করে বাজারে ঝাড়ু দেন, এমন একজন নাগরিক যিনি আগে টিসিবি কার্ড পেতেন, কিন্তু এখন তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকায় সংসার চালানো মাসদার আক্ষেপ করে বলেন, "আমি তো আশা করিনি যে আমাকে বাদ দেওয়া হবে। গত ১০ মাসে কেউ কোনো মালপত্রও পায়নি, সব কিছু বন্ধ।"
এ ছাড়া, বৃদ্ধ আজাদ আলী (৬০)ও তার বাতিল করা কার্ড নিয়ে একই ধরনের হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "এ বয়সেও রংমিস্ত্রির কাজ করি, সংসার চালানোর জন্য। কিন্তু কেন আমার কার্ড বাতিল হলো? আমি তো কোনো রাজনীতি করি না।"
এর পাশাপাশি, বিধবা নিলুফা বিবি (৬৫) অভিযোগ করেছেন, "গরিব, দুস্থ, প্রতিবন্ধী এবং দিনমজুরদের বাদ দিয়ে কার্ডে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। যারা সচ্ছল এবং দলীয় বিবেচনায় তাদের কার্ড দেওয়া হয়েছে।"
নতুন তালিকা নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন স্বপন ৮ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে ২৫ জুন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একই অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, "কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে অনিয়ম করে সুবিধাভোগীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে; প্রকৃত দুস্থরা বঞ্চিত হয়েছেন।"
এ অভিযোগ পাওয়ার পরেই টিসিবি কার্ড বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর, স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির কিছু নেতা টিসিবি কার্ড বাতিলের দাবি তোলেন। এই দাবির প্রেক্ষিতে ৩ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, নতুন তালিকা তৈরি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিএনপির সাবেক সদস্য তাজ উদ্দিন সেন্টুকে এবং জামায়াত নেতা মনিরুজ্জামান সেন্টুকে সদস্য করা হয়।
এ বিষয়ে নগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা অভিযোগ করেন, "কিছু দলীয় নেতা এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পুরো তালিকাই স্বজনপ্রীতিতে ভরা। যারা কার্ড পাওয়ার যোগ্য, তারা পাননি।"
গবেষণা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, "এটা আমি করছি না, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ঠিক নয়।" তবে কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান সেন্টু জানিয়েছেন, "কার্ডের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। আমরা প্রকৃত যোগ্যদের কার্ড দেব। যারা বাদ পড়েছে, তাদের আবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।"
কমিটির আহ্বায়ক তাজ উদ্দিন সেন্টু বলেছেন, "আমাদের ঠিকভাবে তালিকা তৈরি করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদি আগের তালিকাতেই থাকে, তাহলে আমাদের কমিটির দরকার কী?"
রাসিকের ওয়ার্ড কার্যালয়ের সচিব শামসুল ইসলাম জানান, "অভিযোগ পাওয়ার পর আপাতত কার্ড বিতরণ বন্ধ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে এবং সমাধানের চেষ্টা চলছে। আমরা চাই প্রকৃত দুস্থ ও গরিবরা যেন কার্ড পান।"
এছাড়া, স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ, অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে নতুন টিসিবি তালিকা নিয়ে। নতুন তালিকা থেকে বাদ পড়া গরিব, প্রতিবন্ধী এবং বিধবাদের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমাধানের দাবি রয়েছে, যাতে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা উপকার পান।