দুর্গাপূজায় সন্ধ্যা ৭টার আগেই প্রতিমা বিসর্জন শেষ করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই। তবে বিসর্জন অবশ্যই সন্ধ্যা ৭টার আগেই শেষ করতে হবে। পূজা চলাকালীন প্রতিটি মণ্ডপ ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবে এবং সুরক্ষায় পর্যাপ্ত আনসার নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, পূজার সময় আশপাশের মেলায় মদ ও গাজার আসর বসে থাকে। এবারও মেলা আয়োজন করা হলেও, মাদক সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রম চলবে না। এই বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশে আনসার বাহিনী মোতায়েন থাকবে। বিশেষ করে ঢাকায় প্রতিমা বিসর্জনের সময় লাইন মেনে বিসর্জন দিতে হবে এবং কার পরে কে বিসর্জন দেবে, সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এ উৎসব ঘিরে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা ও নাশকতা ঠেকাতে সরকার ১৮ দফা নিরাপত্তা নির্দেশনা প্রস্তুত করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনাগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপির টহল বাড়াতে হবে এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করতে হবে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং পূজা উদযাপন কমিটিকে সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো বক্তব্য বা গুজব ছড়ানো থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে সার্বক্ষণিক পাহারা, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে মনিটরিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছে, যা জেলা প্রশাসক ও ইউএনওরা বাস্তবায়ন করবেন।
পূজা উদযাপন কমিটিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে বলা হয়েছে এবং জরুরি সেবা সংস্থার ফোন নম্বর মণ্ডপে দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পূজামণ্ডপে সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তু যেন প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নজরদারি বাড়াতে হবে।
প্রতিমা ভাঙচুর এড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিসর্জনস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার মোতায়েন রাখতে হবে এবং নারী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিতে হবে। ইভটিজিং ও বখাটেপনা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
পূজায় পটকা ও আতশবাজি পোড়ানো বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিসর্জনের স্থানগুলিতে পর্যাপ্ত আলো, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল প্রস্তুত রাখতে হবে। যেসব মণ্ডপে যাওয়ার রাস্তা খারাপ, সেগুলো সাময়িকভাবে মেরামতেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।