Skip to Content

বড়দের বাদ দিয়ে ১৩ ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল

September 10, 2025 by
Editorialnews24
Inteshar Ahmed Shawan


উড়োজাহাজের টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ১৩টি ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। তবে বড় এয়ারলাইন্সের জিএসএ ও এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৩টি ট্রাভেল এজেন্সি ‘গ্রুপ বুকিং’-এর নামে জনপ্রিয় রুটের টিকিট ব্লক করে রাখত এবং পরবর্তী সময়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপসহ সাব-এজেন্টদের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যে সেই টিকিট বিক্রি করত। এতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অস্বাভাবিক দামে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করত তারা।

এ বছরের শুরুতে উড়োজাহাজের টিকিটের অবিশ্বাস্য উল্লম্ফন নিয়ে শুরু হয় নানামুখী আলোচনা। এর কারণ খুঁজতে তদন্তে নেমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ভাড়া জালিয়াতির তথ্য পায়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, উড়োজাহাজের টিকিটের অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে হাত রয়েছে ১১ এয়ারলাইন্স ও ৩০ ট্রাভেল এজেন্সির। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৩টি ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল করেছে। টিকিট সিন্ডিকেটে এয়ারলাইন্সের যেসব জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সৌদিয়া এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যারাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ার, বাটিক এয়ার, এয়ার এশিয়া, গালফ এয়ারসহ ১১ এয়ারলাইন্স টিকিট জালিয়াতিতে যুক্ত ছিল বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সমকালকে বলেন, আমি এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হওয়ার আগেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুঃখজনকভাবে আমি ওই বিষয়ে অবগত নই। তবে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান। অন্যায় করলে কেউ ছাড় পাবে না।

আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কর কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব বলেন, যেসব জিএসএ ও ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের জিএসএ ও গ্যালাক্সি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ এবং তাঁর স্ত্রী মেরিনা আহমেদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল। পরে শুধু ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য কিছু ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের কর ফাঁকির পরিমাণ অনেক বেশি। এ জন্য যে পরিমাণ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে, সে পরিমাণ টাকার ব্যাংক হিসাব এখনও জব্দ আছে।

গত ২৫ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করেছিল গত ১১ ফেব্রুয়ারি। একই দিনে টিকিটের চড়া দাম রোধে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য ১৪ সদস্যের একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সাড়ে পাঁচ মাস পর ব্যবস্থা নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী তদন্ত শেষে ১৩টি এজেন্সিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে ১১টি এজেন্সি শুনানিতে হাজির হয়নি এবং উপস্থিত দুই এজেন্সির কাগজপত্র যাচাই করে অনিয়ম প্রমাণিত হয়। এর পর জনস্বার্থে আকাশপথে সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেড, সিটিকম ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সি (প্রা.) লিমিটেড, আরবিসি ইন্টারন্যাশনাল, মেঘা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার সার্ভিস, মাদার লাভ এয়ার সার্ভিস, জে এস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, হাসেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ফোর ট্রিপ লিমিটেড, কিং এয়ার এভিয়েশন, বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্ট, সাদিয়া ট্রাভেলস, আত-তাইয়ারা ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল ও এন এম এস এস ইন্টারন্যাশনাল– এই ১৩টি এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।

কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মফিজুর রহমান বলেন, বিমান মন্ত্রণালয় গত ২৬ ও ২৭ আগস্ট আমাদের শোকজ করে দুটি চিঠি দিয়েছিল। এরপর আমরা চিঠির উত্তর না দিয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলাম। হাইকোর্ট ৪ সেপ্টেম্বর ছয় মাসের জন্য এই চিঠি দুটি স্থগিত করেছেন। একই সঙ্গে বিমান মন্ত্রণালয়ে রুল জারি করা হয়। আইন ও বিধি না মেনে মন্ত্রণালয় আমাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে।

সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের জিএসএ ও গ্যালাক্সি লিমিটেডের এমডি আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ বলেন, ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়টি আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট বলতে পারবে। তবে উড়োজাহাজের টিকিট জালিয়াতির সঙ্গে জিএসএদের জড়িত থাকার সুযোগ নেই। উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তাঁকে এ বিষয়ে ভুলভাবে বোঝানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেসব ট্রাভেল এজেন্সি, জিডিএস, জিএসএ বা এয়ারলাইন্স সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, তাদের বিষয়ে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। নিবন্ধন বাতিল হওয়া ট্রাভেল এজেন্সি থেকে এয়ার টিকিট ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

Editorialnews24 September 10, 2025
Share this post
Sign in to leave a comment
Droppable-area shared across all blog's pages