বাংলাদেশের ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের আলোচনা চললেও বাস্তবে তা কার্যকর হওয়া এখনো অনিশ্চিত। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এই ঐক্য গঠনের চেষ্টা ঘিরে বিভিন্ন ইসলামি দলগুলোর মধ্যে দ্বিধা ও সংশয় দেখা দিয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত বিভিন্ন ইসলামি দলকে এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা চালালেও, অধিকাংশ দল এখনো এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। অনেক দলের নেতারা জানিয়েছেন, এই আলোচনা এখনো কেবল টেবিল পর্যায়ে সীমাবদ্ধ, মাঠপর্যায়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। কেউ সরাসরি জামায়াতকে না বলতে না চাইলেও অনেকেই বিকল্পভাবে পৃথক জোট গঠনের চিন্তা করছেন।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ জানান, জামায়াত সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় এবং বৃহৎ ইসলামি জোট গঠনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রক্রিয়া আরও সুসংগঠিত হবে এবং নির্বাচনপূর্ব সময়ে দৃশ্যমান রূপ নেবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাদের দল জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের চিন্তাধারাগত পার্থক্য রয়েছে, বিশেষ করে মাওলানা মওদুদীর দর্শনের সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যগত বিরোধ আছে। এসব কারণে মূলধারার আলেম সমাজ জামায়াতকে সমর্থন করেন না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী বলেন, মাঠপর্যায়ে জামায়াত নিয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে এবং আলেমদের মতামতের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে এখনো দ্বিধায় থাকলেও, সাম্প্রতিক কিছু রাজনৈতিক ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে। তবে দলটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম জানান, তারা ঐক্যের পক্ষে এবং প্রয়োজনে ছাড় দিতে প্রস্তুত, তবে জামায়াতের সঙ্গে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি।
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ১০টি ইসলামি রাজনৈতিক দল রয়েছে, পাশাপাশি অনিবন্ধিত আরও বেশ কিছু ছোট দলও সক্রিয়। অতীতে বহুবার এদের মধ্যে ঐক্য গড়ার চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। তবে ৫ আগস্টের পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং সম্ভাব্য আগাম নির্বাচন সামনে রেখে আবারও ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্যপ্রক্রিয়ার আলোচনা নতুন করে সামনে এসেছে।