আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাংলাদেশের আকাশে দেখা যাবে বছরের শেষ পূর্ণচন্দ্রগ্রহণ। এটি একটি দীর্ঘ সময় ধরে চলবে—রাত ৯টা ২৮ মিনিটে শুরু হয়ে পরদিন ভোর পর্যন্ত স্থায়ী হবে প্রায় ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট। আন্তর্জাতিকভাবে এদিন বিভিন্ন দেশ থেকে গ্রহণটি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। বাংলাদেশ, এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল, আফ্রিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশ থেকেও এই গ্রহণ দৃশ্যমান হবে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
চন্দ্রগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা। এটি ঘটে যখন পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে এসে অবস্থান নেয় এবং একটি সরল রেখায় অবস্থান করে। এই অবস্থায় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে, ফলে চাঁদ তার স্বাভাবিক আলো হারায় এবং কিছু সময়ের জন্য জ্যোতিহীন হয়ে পড়ে। তখন পৃথিবী থেকে দেখা যায় চাঁদ আংশিক বা পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে গেছে।
ইসলাম ধর্মে সূর্য ও চন্দ্রকে আল্লাহর সৃষ্টি ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, “তিনিই সূর্যকে করেছেন উজ্জ্বল এবং চাঁদকে করেছেন জ্যোৎস্নাময়।” (সুরা ইউনুস : ৫)। আবার সুরা কিয়ামার আয়াতে এসেছে, “যখন দৃষ্টি হতভম্ব হবে, চাঁদ জ্যোতিহীন হয়ে পড়বে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে।” (কিয়ামা : ৭-৯)। এই আয়াতগুলো কেয়ামতের আলামত হলেও বাস্তব চন্দ্রগ্রহণের ঘটনাকেও ইঙ্গিত করে বলে অনেক ইসলামি স্কলার ব্যাখ্যা করেছেন।
চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের সময় ইসলামে কিছু নির্দিষ্ট আমলের নির্দেশনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর দুটি নিদর্শন। এগুলো কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে গ্রহণে যায় না। তাঁর নিজের ছেলে ইব্রাহিমের মৃত্যুর দিন সূর্যগ্রহণ ঘটেছিল, তখন কিছু সাহাবি এটিকে ইব্রাহিমের মৃত্যুর সাথে যুক্ত করেন। তখন রাসুল (সা.) তাদের এই ভুল ধারণা সংশোধন করেন এবং বলেন, “যখন তোমরা সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ দেখবে, তখন আল্লাহর কাছে ফিরে যাও, দোয়া করো, তাঁর মহিমা ঘোষণা করো, নামাজ আদায় করো এবং সদকা দান করো।” (সহিহ বোখারি, হাদিস: ১০৪০; আবু দাউদ: ১১৭৭)
চন্দ্রগ্রহণের সময় যে বিশেষ নামাজ আদায় করা হয়, তাকে বলা হয় ‘সালাতুল খুসুফ’। এটি একটি নফল নামাজ এবং এটি একাকী আদায় করাই সুন্নাত। সূর্যগ্রহণের ক্ষেত্রে জামাতের ব্যবস্থা থাকলেও চন্দ্রগ্রহণের নামাজ জামাতে পড়ার বিধান নেই। তাই মসজিদে গিয়ে জামাত করার প্রয়োজন নেই।
এই নামাজ দুই রাকাত হলেও ইচ্ছা করলে চার বা তার বেশি রাকাত পড়া যায়। তবে প্রতি দুই রাকাত পর সালাম ফিরিয়ে আলাদা করতে হবে। নামাজে আজান বা একামতের প্রয়োজন নেই। নামাজ শেষে দোয়া, ইস্তিগফার, জিকির ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ায় সময় কাটানো উত্তম। আল্লাহর কাছে রহমত ও হেফাজতের জন্য বেশি বেশি প্রার্থনা করা উচিত।
চন্দ্রগ্রহণ যেমন একটি বৈজ্ঞানিক ও জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা, তেমনি এটি একজন মুসলিমের জন্য আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর গুণাবলি স্মরণ করারও এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এই সময়টিকে ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে কাটানোই উত্তম।